বুধবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১২

                 
             রেলগাড়ি
                 ঈশ্বরগঞ্জ - ১৯৭৮                                     

ঝক্ ঝক্ ঝক্ ঝক্ চলে রেলগাড়ি
গাছ-পালা ঘরবাড়ি সবকিছু ছাড়ি,
খোলা আকাশের নীচে দ্রুতবেগে ধায়
ইষৃটেশন এলে পরে হঠাৎ থেমে যায়।

ঝক্ ঝক্ ঝক্ ঝক্ চলে রেলগাড়ি
সীমাহীন রেলপথ ধরে দেয় পাড়ি,
মাঝে মাঝে নিরবতা করে খান
গগন ভেদিয়া ছুরে হুইসেল বান।

ঝক্ ঝক্ ঝক্ ঝক্ চলে রেলগাড়ি
কোথাও থামে না মাঝে যদি হয় দেরি,
সময়ের সাথে সে যে ছুটে অবিরত
পেটে নিয়ে অগণিত লোক শত শত।

ঝক্ ঝক্ ঝক্ ঝক্ চলে রেলগাড়ি
নেই কোন অভিযোগ যত বোঝা ভারী,
মাঠঘাট প্রান্তর পিছনেতে ফেলে
গুরুগম্ভীর নাদে চলে হেলে দোলে।

ঝক্ ঝক্ ঝক্ ঝক্ চলে রেলগাড়ি
নিয়মিত একপথে দিতে হয় পাড়ি,
মানুষের সেবা করে কেটে যায় বেলা
কর্তব্য পালনে সে করে নাকো হেলা।


      ঈদের সাম্যনীতি
                                             
ঈশ্বরগঞ্জ - ১৯৭৯

শান্তসুদূর নীল আকাশে
                        
দোলছে ঈদের চাঁদ,
মায়ের কোলে শিশু যেমন
                        
ঘুমোয় দিবারাত
ঈদের খুশী ছোটবড়
                        
সবার মনে জাগে,
দুপক্ষকাল উপবাসে 
                        
কাটলো যাদের ত্যাগে
ছোট বড় নাই ভেদাভেদ
                        
সবাই আজি সমান,
সৃষ্টির সেরা মানবজাতি
                        
হবে যে হেথা প্রমাণ
এক সারিতে দাঁড়িয়ে সবে
                        
করবে মোনাজাত,
গলায় গলায় মিলবে শেষে
                        
পরবে না কেউ বাদ
ধনী গরীব আমির ফকির
                        
ভুলে গোত্র জাতি,
রচনা করবে স্বর্গ ধরায়
                        
গাইবে সাম্য গীতি
একের সুখেঅপরে সুখী
                        
পরের দুঃখে দুঃখী,
ঘুচবে সবার দুঃখ কষ্ট
                        
সবাই হবে সুখী
চিরস্থায়ী করতে হবে
                         ঈদের সাম্যনীতি,
অবাক নেত্রে দেখবে জগত
                        আমরা শ্রেষ্ঠ জাতি 


বর্ষা এলো ফিরে
                                       
ঈশ্বরগঞ্জ - ১৯৮৪

নূপুর পায়ে ছন্দ তুলে
                           
বর্ষা ফিরে এলো,
অবিরাম ঝরছে শুধু
                           
বৃষ্টি এলোমেলো
নদ-নদী খাল-বিল
                           
পূর্ণ হলো জলে,
সরসীতে শাপলা-কমল
                           
উঠছে দোলে দোলে
ক্ষণে ক্ষণে কাঁপছে ধরা
                           
মেঘের গরজনে,
কদম কেয়া বকুল বেলা
                           
ফুটছে বনে বনে
কাজল কালো বরণে ছেয়ে
                           
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো,
অবিরাম ঝরছে শুধু
                           
বৃষ্টি এলোমেলো




      সামান্য ভুল হলে
                                           
ঈশ্বরগঞ্জ - ২৭/০৬/১৯৮৬

কাগজ কলম                            নিয়ে বসে আছি 
                  
লিখব একটা কিছু,
রাত কত হলো                         জানি না কিন্তু
                  
ঘুম ছাড়ছে না পিছু
এক দুই তিন                            চার লাইন লিখে
                  
কলম আর না চলে,
পণ করেছি আজ                       শেষ না করে 
                  
উঠব না ভোর হলে
চিন্তার জাল                               বিছায়ে দিয়াছি
                   
ভাবের সমুদ্রেতে,
ছন্দ তাল                              দেয় না যে ধরা
                
চায় শুধু চলে যেতে
এমনি করে                               রাত দ্বিপ্রহর 
               
চলে গেলো কোন ছলে,
লিখছি তবুও                             ক্ষমা করে দিও
                    সামান্য ভুল হলে 

     
      তোমার বিহনে
                               
ঈশ্বরগঞ্জ - ৩০/০৬/১৯৮৬

তোমার বিহনে                                সবুজ কাননে
                    
কুসুম যে নাহি ফোঁটে,
মধুকর তাই                                    গুণজনে ওই
                    
এদিক ওদিক ছোঁটে
তোমার বিহনে                                 সুনীল গগনে
                      
রবি না প্রকাশ হয়,
গ্রহ তারা শশী                                   সমস্ত নিশী
                     
জ্যোছনা নাহি ছড়ায়
তোমার বিহনে                                 সাগর গহীনে
                       
নিস্তেজ স্রোত বহে,
জোয়ার আসে না                             ভাটাও পরে না
                         
নিরব নিথর রহে
তোমার বিহনে                                 ঘোর অরণ্যে
                      
সবি যে লাগে আঁধার,
বিহঙ্গ শত                                       কুজনেতে রত 
                    
হয় না কখনো আর
তোমার বিহনে                                 দক্ষিণা পবনে
                      
জুড়ায় না দেহ মন,
মাতাল বেগেতে                                ধানের শীষেতে
                       
বুলায় না পরশন
তোমার বিহনে                                 আষাঢ় শ্রাবনে
                       
হয় না যে বরিষন,
ক্ষণে বার বার                                 মেঘমালা আর
                     
করে না যে গরজন
তোমার বিহনে                               আজি ফাগুনে
                      
ঘরে নাহি রয় মন,
কাটে না সময়                                 কি করিব হায়
                      
ভাবি বসে অনুক্ষণ
তোমার বিহনে                                প্রকৃতির সনে
                      
কত কথা বলে যাই,
কেটে যায় বেলা                              করে কত খেলা
                      
আনন্দ তবু না পাই
তোমার বিহনে                                ভরা যৌবনে
                      
নিরস লাগে ধরণী,
কত রূপ রাশি                                 সবি হলো বাসি
                      
যেন তিমির বরণী
তোমার বিহনে                                আমি নিরজনে
                    
একা একা বসে ভাবি,
তুমি যে আমার                             আমি যে তোমার
                     
নাহলে বৃথা যে সবি
তোমার বিহনে                                মোর কবি মনে
                      
বিরহের সুর বাজে,
কবে বধুবেশে                                  দেখা হবে শেষে
                     অপরূপ কোন সাজে 


      জন্মভূমির তরে
                                 ঈশ্বরগঞ্জ - ২৬/০৬/১৯৮৬
শস্য-শ্যামলা সুজলা-সুফলা
                                    
সোনার বাংলাদেশ,
বিশকোটি হাতে গড়ব মোরা
                                     
ভুলে হিংসা-বিদ্বেষ।
পরাধীনতার শৃংখল ছিঁড়ে
                                     
মুক্ত করেছি সবি,
ফিরিয়ে এনেছি স্বাধীনতা আজি
                                      
কেড়েছি রক্ত রবি।
ঊষার গগনে রাখালের গানে
                                      
মুখরিত চারিদিক,
নদীর চরেতে আলো প্রতিফলে
                                       
বালি করে চিক্মিক্
ভাটিয়ালী সুর মাঝি ভাই সাধে
                                       
বাদাম তুলিয়া নায়,
ছুটিয়া চলিল অজানার টানে
                                       
পূব-দক্ষিণা বায়।
সবুজ কোমল ঘাসের গালিচা
                                      
বিছায়ে দিয়াছি কত,
সাদা বালিহাঁস উড়ছে গগনে
                                       
অসংখ্য শত শত।
পদ্মা মেঘনা ভাগিরথী আর
                                       
যমুনা কর্ণফুলী,
ভাঙছে এপাড় গড়ছে ওপাড়
                                       
আরাম আয়েশ ভুলি।
বনে বনে সবে ফুটছে কত যে
                                        
নাম হারা সবফুল,
দক্ষিণা বাতাসে গন্ধ বিলিয়ে
                                        
দোলছে যে দোল দোল।
ধূসর বরণ মেঘের চাদর
                                        
জড়ায়ে রয়েছে গায়,
নদীর জলেতে আগুন জ্বালিয়ে
                                        
সূরয অস্ত যায়।
জন্মভূমির তরে আজ মোরা
                                        জীবন করেছি পণ,
যত শত বাঁধা আসুক সুমুখে
                                        লড়ব যে আমরণ 



      আমি কবি হতে চাই
                         ঈশ্বরগঞ্জ - ৩০/০৬/১৯৮৮

আমি কবি হতে চাই,
নামডাক ছড়িয়ে নয় তাই
তোমার মনেতে পাব এতাটুকু ঠাঁই
এই কামনায় আমি গান গেয়ে যাই,
আমি কবি হতে চাই।

আমি হতে চাই কবি,
হৃদয় পটে এঁকে যাব ছবি
আকাশে যেমন ওঠে জ্বলন্ত রবি
কিরণ ছড়িয়ে আলোকিত করে সবি,
আমি হতে চাই কবি।

আমি চাই কবি হতে,
মিশে যাব প্রকৃতির সাথে
স্মৃনে আসব আমি শরতের রাতে
ঘুম হয়ে নেমে যাব তোমা আঁখি পাতে,
আমি চাই কবি হতে।

কবি হতে চাই আমি,
লিখে যাব তাই দিবসযামী
তারাভরা রাতে যদি কাছে থাকো তুমি
ঊষা আসবে না আর ধরণীতে নামি,
কবি হতে চাই আমি।  


       জীবন সায়াহ্নে
                                                                           ঈশ্বরগঞ্জ - ১৭/০৮/১৯৮৮

মনে পড়ে আজি
শৈশবকালে কেটে যাওয়া কত ক্ষণ
বাবামা সেই স্নেহের পরশ কখনো বা শাসন,
এমনি করে শৈশব থেকে বাল্যের আগমণ।

মনে পড়ে আজি
সেই ছুটাছুটি খোলা মাঠ প্রান্তরে
লাটিম ঘুরিয়ে ঘুড়ি উড়িয়ে ফিরে আসা শেষে ঘরে,
খেলার সাথীরা কোথায় যে গেল ব্যথা রেখে অন্তরে।

মনে পড়ে আজি
ভরা বরষার বৃষ্টিতে ভিজে নেয়ে
কদম ফুলের মালা গড়াতাম কদম তলায় যেয়ে,
কত না খুশী হতো যে বুজান ফুলের মালা পেয়ে।

মনে পড়ে আজি
বাল্যকালের ঝলমলে সব স্মৃতি
চাঁদনী নিশীথে দাদুর কাছেতে শুনতাম শ্লুকগীতি,
বাল্যের পরে কৈশর এলো এই তো নিয়ম রীতি।

মনে পড়ে আজি
পদ্ম দিঘীতে গোছল করার ছলে
এপারে ওপারে সাতার কেটে কত বেলা যেত চলে,
ভয়ে ভয়ে তাই ফিরতাম ঘরে পাছে কেউ কিছু বলে।

মনে পড়ে আজি
শীতে সকালে লেপ মুড়ি দিয়ে বসে
পাঠশালার  গুরু মশায়ের পাঠ সেরে অবশেষে,
হরেক রকম পিঠা  পায়েস খেতাম খেজুর রসে।

মনে পড়ে আজি
বাঁশ ঝাড় হতে ছিপ কেটে এনে চেঁছে
বড়শী বানিয়ে মাছ ধরেছি খালের সাঁকোর কাছে,
দূর্বার বেগে যৌবন এলো কৈশর গেলো পাছে।

মনে পড়ে আজি
রঙিন স্বনে বিভোর গোধলী লগ্ন
নব-বসন্তে মনের বাগানে কোকিল গানেতে মগ্ন,
কোমল পরশ বুলিয়ে মানসী সব ধ্যান করে ভগ্ন।

মনে পড়ে আজি
উত্তাল সেই যৌবনেরই কথা
স্রোতের মত এলো আর গেলো এখন সবি যে বৃথা,
ধীরে ধীরে গেলো যৌবন এলো বার্ধক্য যথাতথা।

মনে পড়ে আজি
স্মৃতি বিজড়িত সোনলী কতযে দিন
আসবেনা ফিরে কোনদিন আর হয়ে গেছে চির লীন,
নিজেকে হারিয়ে সেই কালে শেষে একালে নিঃস্বহীন 
       


             বিক্ষুব্ধ তারুণ্য

          ঈশ্বরগঞ্জ – ২৮,২৯/১২/১৯৮৯ ইং



আমি চলে যেতে চাই গ্রহান্তরে


মহাশূন্যের কালো আঁধারে মিশে হেবো একাকার


ভীষণ একাকী হয়ে যেতে আমি চাই শুধু বারবার।



যদি থেকে যেতে হয় এই পৃথিবীতে -
               কাঁটা হয়ে রবো ফুলের বৃন্তে
কোমল হাতের ঝরাতে রক্ত
               মহাসুখে নিশ্চিন্তে।
আমি বিকট হাসিতে ফেটে পড়ে দেবো
                    সৌরজগত কাঁপিয়ে,
              আমি উঠেছি কেমন হাপিয়ে।

আমি ক্যান্সার হয়ে ছড়িয়ে পড়বো
                  সমাজ দেহের ভিতরে,
ভয়ে দৌড়ে পালাবে যত রোগব্যাধি
                 আসবে না কেউ কাছে,
শুধু ভেঙে দিয়ে সব রক্ত কণিকা
                  ভাইরাসে দেবো ভরে।

আমি ফিলিস্তিনি গেরিলার রূপে
জন্ম নেবো কাঁটা ভরা ঝোপে
বজ্র আঘাত হেনে যাবো আমি
       বদ্ধ করা দুয়ারে ;
খোলে দেবো যত আবরণ
             ঠিক ছিল আগে সব যেমন,
শত্রুর বুক ঝাঝরা করবো মেশিনগানের ফায়ারে।

আমি পূবের আকাশে কালো সাঝ হয়ে
                   ভেসে বেড়াতে চাই,
ঊষার আলোকে আলোকিত ভোর
চুরি করে নেবো আমি মহাচোর
আঁধার হৃদয়ে ছেড়ে দেবো নিয়ে
                  যদি সেথা হয় ভোর ;
আমি শীতের রাতের সুখের স্বপ্ন
                  ভেঙে দিয়ে সুখ পাই।

আমি সাগর তলে টর্পেডো সেজে প্রবল গতিতে ছুটি, গুপ্তচরের মতো চুপিসারে শত্রু জাহাজে ফুটি।
আমি সিরাজের হাতে শানিত কৃপাণ
              শত্রুর দেহ করে খান খান,
রক্তের শ্রোতে ভাসিয়ে দেবো পলাশীর ময়দান,
ভয়ে থরথর করে কেঁপে উঠবে মীরজাফরের প্রাণ।

আমি ভূমিকম্পের প্রবল কাঁপুণী গুরুগম্ভীর নাদ,
চোখের পলকে মাটির সাথে
মিশিয়ে দেবো কঠিন হাতে
উঁচু উঁচু সব দালান কোঠার গগনচুম্বী ছাঁদ,
ফাটল ধরাবো শত্রু রাজ্যে পাতবো গুপ্ত ফাঁদ।

আমি চীনের প্রাচীরে রূপায়িত হয়ে
                  চারিদিক রবো ঘিরে,
ফলে প্লাবনের জল আছড়ে পরবে
                  দুর্ভেদ্য প্রাচীরে,
ছোট ছোট সব কুড়ে ঘর যত
আগলে রাখতে আমি সদা রত
টর্ণেডোরই মহা গতিবেগ ফিরে যাবে ধীরে ধীরে,
হাসিমুখে আমি মিশে যাবো সেই বঞ্চিতদের ভীরে।

আমি সব কাজ শেষে কামারের বেশে
                 প্রতি ঘরে গিয়ে গিয়ে,
মুড়ে দেবো যত প্রেমিক হৃদয় ইস্পাত ধাতু দিয়ে,
পরশ পাথরে গড়িয়ে হৃদয়
           ধুয়ে নিয়ে খাঁটি প্রেমের আলোয়,
হৃদয়হীনের বুকচিড়ে আমি যতনে দেবো বসিয়ে,
ভিতরের কালো আঁধার নাশিব
                 প্রেমের আলো জ্বালিয়ে

        কি দারুণ শিল্পী ওরা
           ঈশ্বরগঞ্জ - ২৪/১২/১৯৮৯ ইং

 কি দারুণ শিল্পী -   
 এদেশের দামাল সন্তানেরা ।
 পীচঢালা রাজপথে আর সবুজ প্রান্তরে
 কি সুন্দর আল্পনা এঁকে যায় ওরা
 অস্তরাগের লালিমা দিয়ে ।

 রক্তলাল মানচিত্র এঁকেছে ওরা
                 বঙ্গোপসাগরের তীরে ।
 সজারুর আত্মরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়া রয়েছে
                       ওদের মাঝে,
 রয়েছে দ্রুতগামী চিতার ক্ষিপ্রতা,
 আরো রয়েছে কালবৈশাখীর প্রচন্ডতা ।
 প্রকাশ্যে এঁকে চলেছে ওরা
          একের পর এক আজব সব চিত্র ;
 চিরস্থায়ী ক্যানভাসে সুনিপুণ কৌশলে
                 শুধু লালের ছড়াছড়ি ।
 প্রতিটি চিত্রে ফোঁটে ওঠে -  
                   ওদের তীব্র আক্রোশ,
                  প্রতিশোধের দাবানল ।
 প্রতিটি স্থান ওদের অঙ্কিত চিত্রে ভরা,
          কি দারুণ শিল্পী ওরা !



               রবোট আমি
           ঈশ্বরগঞ্জ - ০৩/০২/১৯৯০ ইং

আমায় ভুলতে চাও ?
               - পারবে না কখনো ;
তোমার চেতনায় চির নিবাস আমার ।
একাকী কখনো যদি চোখ বুজে থাকো
গভীর রাতে -
নিবিড় একাগ্রতায় সেই নামে ডাকো
দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি ঠাঁয় !

মনে হবে ভীনগ্রহের কোন আজব প্রাণী
ভয় পেয়োনা ! ঐ তো ইষ্টেশনে বারোটার মেলট্রেনের ঘন্টাধ্বনি ভেঙে দিল রাতের নিস্তব্ধতা ।

তোমার চোখের পাতায় নেমে আসা
তন্দ্রার সুখটুকু কেড়ে নিয়ে আমি চলে যাচ্ছি,
আমি ফিরে যাচ্ছি সেই গবেষণাগারে -
যেখানে সহস্র আমি তৈরী হচ্ছি প্রতিদিন
              জ্বলজ্যান্ত রবোটের রূপে ।

     


                 জীবন বৃক্ষ
           ঈশ্বরগঞ্জ - ২৭/১২/১৯৮৯ ইং

ঝরে গেলো আরো একটি পাতা
জীবন বৃক্ষ হতে
নিঃশব্দে, নিরবে -  
           একে একে সব ঝরে পড়বে,
হাঁর কাঁপানো মাঘের শীতে হয়ে যাবে নিস্প্রাণ ;
ভ্রমর আসবেনা, ফুল ফুটবেনা, 
               পাখিরা গাইবেনা গান ;
এডালে ওডালে ছুটাছুটি করে
            প্রাণের ছোঁয়ায় রাখবেনা ভরে,
ক্লান্ত পথিক বসবেনা এসে ছাঁয়াহীন গাছতলে ;
কখন আবার ঝড়ো হাওয়া এসে
                 আঘাত হানবে মূলে ।



           হবু রাজার এই দেশে
            ঈশ্বরগঞ্জ - ১৪/১২/১৯৯০ ইং

উপসাগরে সংকট আর স্বদেশে ধমর্ঘট
লাঠিচার্জ  আর কাঁদানে গ্যাসে
                হলো তা আরো প্রকট ।
সারা দুনিয়ায় রব উঠলো "সাদ্দাম সাদ্দাম,"
আমাদের দেশে হবু রাজা কন নিজে বাঁচলেই নাম ।
গবুমন্ত্রীর সাথে শলা করে রাজা কন অবশেষে,
“জরুরী আইন জারি হলো শুনো
                আজ হতে সারা দেশে ।”
স্বাধীনতাকামী জনতার স্রোত নেমে এলো রাজপথে,
স্বৈর শাসন উৎপাটনের সঙ্কল্পে শপথে ।
হবু রাজা দেখে মহা সঙ্কট 
কি করি কি করি হায় !
চালাও গুলি” আদেশ দিলেন নইলে যে বাঁচা দায় ।
লালে লাল হলো তাজা খুনে সব পথ ঘাট প্রান্তর,
শেষ বাঁচা আর হলোনা রাজার
                  দিয়েও মরণ কামড় ।
হবুরাজা আর মহারাণী সহ গবুমন্ত্রীর দল,
গণবিদ্রোহে ভেসে গেল নিয়ে সব চাতুরী ও ছল ।
গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে এদেশের ঘরে ঘরে,
স্বৈরশাসন হলো নিরসন সুদীঘর্কাল পরে ।


                   অন্বেষণ
         ঈশ্বরগঞ্জ ১১/০৮/১৯৮৯ ইং

     আকাশের মাঝে আমি পেলাম তোমায়
      যখন তৃষিত মন কাছে পেতে চায়,
           দৃষ্টির সীমা ছাড়ি
           পাখিরা দেয় যে পাড়ি
     সেই সাথে মন মোর চলে যেতে চায়,
     আকাশের মাঝে আমি পেলাম তোমায়।

     আকাশের মাঝে আমি পেলাম তোমায়
     যখন তৃষিত মন কাছে পেতে চায়,
           দিগন্ত রেখা যবে
           মিশে একাকার হবে
     দিবাকর থেকে থেকে লালিমা ছড়ায়,
     আকাশের মাঝে আমি পেলাম তোমায়।

     সাগরের মাঝে আমি পেলাম তোমায়
     যখন তৃষিত মন কাছে পেতে চায়,
          সুবিশাল জলরাশি
          জোয়ারের রূপে আসি
     ধরণীর মলিনতা ধুয়ে নিয়ে যায়,
     সাগরের মাঝে আমি পেলাম তোমায়।

     সাগরের মাঝে আমি পেলাম তোমায়
     যখন তৃষিত মন কাছে পেতে চায়,
          তটিনীর সমাগমে
          সাগরের সঙ্গমে
     মত্ত লহরী মালা নাচে মোহনায়,
     সাগরের মাঝে আমি পেলাম তোমায়।

     কাননের মাঝে আমি পেলাম তোমায়
     যখন তৃষিত মন কাছে পেতে চায়,
          সবুজের ছড়াছড়ি
          গাছগুলি আড়াআড়ি
     দাঁড়িয়ে রয়েছে সবে নিজ নিজ ঠাঁয়,
     কাননের মাঝে আমি পেলাম তোমায়।

     কাননের মাঝে আমি পেলাম তোমায়
     যখন তৃষিত মন কাছে পেতে চায়,
          নিস্তব্ধ পরিবেশে
          হিমেল পবন এসে
     তোমারি দেহের মৃদু ছোঁয়া দিয়ে যায়,
     কাননের মাঝে আমি পেলাম তোমায়।



অনাবৃত অধ্যায়
           ঈশ্বরগঞ্জ - ২৩/১২/১৯৮৯ ইং

 এ কোন অধ্যায়ে বিচরণ করছি আমি ?
 শৈশবের দুরন্তপনা কৈশরের শতকল্পনা পেরিয়ে
 অজানা কক্ষপথে থেমে গেছি হঠাৎ ।

 প্রদক্ষিণ করে চলেছি অনাহূত বতর্মানকে
 অসংথ্য সূয্যের মহাকর্ষ শক্তি ছিন্ন করে ;
                এ আমি কোন আমি ?
 আমার আঁধার পৃষ্ঠে প্রতিফলিত হতে দেবোনা
                  কোন আলোকচ্ছ্বটা ।
 নিস্ফল আক্রোশে ফেটে পড়া দেখতে চাই
                   অসংখ্য সূরযের ।

 চাঁদের অপর পৃষ্ঠ আমি দেখেছি
 তাই দেখতে চাইনা আর নাটকের শেষ অঙ্ক ।
 আমি ভীষণ ক্লান্ত -
 তাই ফিরে যেতে চাই অস্তিত্বহীন ক্রান্তিলগ্নে । 


     

          
     
     অচিন দেশের ময়না
                                            ঈশ্নরগঞ্জ - ১৯৭৯ 

এক যে ছিল রাজপুত্তুর
                             
ধরলো সে এক বায়না,
শিকার করে আনবে সে যে
                             
অচিন দেশের ময়না
পঙ্খীরাজ ঘোড়ায় চড়ে
                              
ছুটলো সে দূর দেশে,
সাত সমুদ্দুর তেরো নদী
                              
পেরুলো এক নিমিষে
অচিন দেশের অচিনপুরে
                              
পৌছুলো সে যেই,
চতুর্দিকে রব উঠলো
                              
হাঁই মাঁই খাঁই খাঁই
ঢাল তলোয়ার বাগিয়ে ধরে
                              
যুঝলো সে যে একা,
রাক্ষস আর নেই যে কোথাও
                              
সব একদম ফাঁকা
অচিন দেশের অচিনপুরে
                              
অচিন ময়না বসে,
অচিন সুরে গুনগুনিয়ে
                              
গান ধরেছে কষে
ময়না নিয়ে রাজপুত্তুর 
                              
চললো যে বীর বেশে,
পঙ্খীরাজে এক নিমিষে
                              
চলে এলো তাঁর দেশে



       স্বাধীন এদেশ
                                           
ঈশ্বরগঞ্জ - ১৯৮৪

স্বাধীন এদেশ                             স্বাধীন মোরা
                  
স্বাধীন বাংলা ভাষা,
স্বাধীন মোরা                              দশকোটি প্রাণ
                 
স্বাধীন মোদের আশা
স্বাধীন এদেশ                              স্বাধীন মোরা
                    
স্বাধীন সবুজ বন,
স্বাধীন দেশের                             সাগর নদী
                    
স্বাধীন নীল গগন
স্বাধীন এদেশ                              স্বাধীন মোরা
                     
স্বাধীন সমীরণ,
স্বাধীন মোরা                              নবীন তরুণ
                   
স্বাধীন মোদের মন
স্বাধীন এদেশ                              স্বাধীন মোরা
                    
স্বাধীন প্রাণীকূল,
স্বাধীন হলো                              দোয়েল-শ্যামা
                   স্বাধীন শাপলা ফুল
স্বাধীন এদেশ                              স্বাধীন মোরা
                    
স্বাধীন রক্ত রবি,
স্বাধীন হলো                               পদ্মা মেঘনা
                  
স্বাধীন আজ সবি


       এলো আষাঢ়
            ঈশ্বরগঞ্জ - ২৯/০৬/১৯৮৬                                                                                                    

এলা আষাঢ়                        সব একাকার
               নামলো যে  ঢল,
ডুবলো মাঠ                        ডুবলো ঘাট
              নদীতে অথৈ জল।
গর্জে বাদল                        বাজলো মাদল
              বাজ পরে কড়কড়,
চারিদিকে জল                     করে ছলছল
                ভাসছে বাড়ীঘর।
বইছে পবন                        শন শন শন
              জলেতে তুলে ঢেউ,
পথঘাট সব                        শূণ্য নিরব
             বাহিরে না রয় কেউ।
শাপলা কমল                     মেলে শতদল
              ফুটছে ঝিলের জলে,
ভাসিয়ে ভেলা                     করছে খেলা
              ছেলেমেয়ে সব মিলে।
ঝরছে বারি                        ঝরঝর করি
              সারা দিনরাত ধরে,
সবুজ কানন                      পেলো যে জীবন
         আষাঢ় মাসের তরে।


     কোথায় তুমি যাও
                                         
ঈশ্বরগঞ্জ - ২৮/০৬/১৯৮৬

কে গো তুমি বলো, কাজল কালো হরিণ চোখে চাও ?
নূপুর পায়ে ঝুমুর ঝুমুর কোথায় তুমি যাও ?
সুনীল গগন লুটোয় তোমার শাড়ীর আচলেতে,
হেরিনু আমি গভীর সাগর তোমার নয়নেতে

চাঁদের জ্যোছনা নিমিষে কাড়িয়া অঙ্গেতে মাখাও,
পর্ব্বতচূড়া বক্ষে ধরিয়া কোথায় তুমি যাও ?
রাঙা দুটি ওষ্ঠ তোমার কমল পাপড়ি সম,
মুক্ত ঝরানো মধুর হাসিতে মন কেড়ে নিলে মম

সবুজ কানন ডাকছে তোমায় হাত দুটি বাড়াও,
অবুঝ মনেতে সবুজ মাখিয়ে কোথায় তুমি যাও ?
তারকাপুঞ্জ মিটমিটিয়ে হাসছে তোমায় হেরি,
মিতালীর ছলে নেমে আসে   জোনাকীর রূপ ধরে

পিককন্ঠ সুরে যেন তুমি গুনগুনিয়ে গাও,
মেঘবরণ চুল এলিয়ে কোথায় তুমি যাও ?
তোমার পরশে আকাশ বাতাস স্বর্গ মর্ত্য ব্যাপি
ধরণীর বুকে যত রূপ রাশি ধন্য হলো যে সবি


      সেই এক সাধক
                            ঈশ্বরগঞ্জ - ২৩/০২/১৯৮৮
  
সাধক আছিলেন এক বোকাইনগরে,
জীর্ণ কুটিরে তাঁর সরল নিবাস
প্রকৃতি দানিল যেথা শোভা রাশ রাশ
তারি যশোগাঁথা আমি রচি বসে ঘরে,
সাধক আছিলেন এক বুকাই নগরে।

সাধক আছিলেন এক বোকাইনগরে,
জীবন ব্যাপিয়া জ্ঞান করি আহোরণ
পরশ পাথরে স্বর্ণ  করিলেন মন
প্রসরিত দৃষ্টি তাঁর আধ্যাত্মিক নজরে,
সাধক আছিলেন এক বোকাইনগরে।

সাধক আছিলেন এক বোকাইনগরে,
সরল চাহনী তাঁর চিরযুবা মন
দিব্যদৃষিটতে তায় হেরি তত্ত্বজ্ঞান
প্রদর্শণ করিত সবে ভক্তি নত শিরে,
সাধক আছিলেন এক বোকাইনগরে।

সাধক আছিলেন এক বোকাইনগরে,
অশিতিপর বৃদ্ধ তিনি কালের প্রতীক
সবারে সমান ভালো বাসিতেন ঠিক
ভালোমন্দ যেবা আসুক তাঁহার কুটিরে,
সাধক আছিলেন এক বোকাইনগরে।

সাধক আছিলেন এক বোকাইনগরে,
অতি মানবীয় গুণে গুণের আধার
অস্থায়ী জগতের রীতি জানিতেন সার
স্থায়ীত্বের খোঁজে রত রহিতেন ঘরে,
সাধক আছিলেন এক বোকাইনগরে। 

সাধক আছিলেন এক বোকাইনগরে,
জ্ঞানদানি একে একে তুলিয়া পতিতে
দেশ  দশের সেবা করিলেন অতীতে
চন্দ্রে আলো ধার দিয়া সূর্যে যাহা করে,
সাধক আছিলেন এক বোকাইনগরে।

সাধক আছিলেন এক বোকাইনগরে,
সদা হাসিখুশী মুখে স্নেহমাখা কথা
পরার্থে করিয়া ব্যয়সময় যথাতথা
কেটে যেত দিন তাঁর ভক্তের ঘরে ঘরে,
সাধক আছিলেন এক বোকাইনগরে।

সাধক আছিলেন এক বোকাইনগরে,
আঁকাবাঁকা মেঠো পথে রচি পদক্ষেপ
পথচারীর কুশল বার্তা শুনি সংক্ষেপ
বিগলিত হতেন তিনি পরের দুঃখের তরে,
সাধক আছিলেন এক বোকাইনগরে।  


      শহরবাসীর তরে
                              
ঈশ্বরগঞ্জ - ২৭/০৬/১৯৮৬

গ্রাম নিয়ে যত কবিতা গাঁথা 
                             
রচনা করেন কবি,
শহরে কি তাই রয়েছে শূন্য
                             
নিঃস্প্রাণ সব ছবি
দেখো চেয়ে কত গগনচূম্বী
                             
অট্রালিকার সারি,
বিজলী বাতিরা নিমিষে নিলো
                             
রাতের আঁধার কাড়ি
রাতদুপুরে ঝিঝির বদলে 
                             
যান বাহনের রবে,
আজানের ধ্বনী মুখরিত হয়ে
                             
ভোর হলো এই সবে
কাকডাকা ভোরে উঠিছে সকলে
                             
অফিস যাওয়ার তরে,
ধীরে ধীরে দেখো উঠলো যে ঊষা
                             
আলোয় জগত ভরে
প্রশস্ত সব রাজপথে দেখো 
                             
ছুটছে কত না গাড়ী,
পথচারীগণ অতি সাবধানে 
                             
রাস্তা দিতেছে পাড়ি
চারি রাস্তার মিলনে দাঁড়িয়ে 
                             
ট্রাফিক বাজায় বাঁশী,
শত শত গাড়ি রিক্সা ট্যাক্সি
                             
থেমে গেছে ব্র্যাক কষি
ভেসে আসে কত ধাতব শব্দ
                             
কল কারখানা হতে,
চেয়ে দেখো সবে শিক্ষার্থীরা 
                             
যেতেরছ ইস্কুলেতে
এমনি ধারায় চির কোলাহলে
                             
শহরবাসীরা চলে,
গ্রামের মূল্য কিসে হতো ভাই
                              শহর না নির্মিলে 


     বিজয় কেতন উড়ে 
        ঈশ্বরগঞ্জ - ২৮/০৬/১৯৮৮                                   

চলতে পথে হঠাৎ আমি থমকে গিয়েছি,
উদাসচোখে মরুৎপথে তোমায় দেখেছি ;
পয়োদভেদী অংশুদানে ধন্য অংশুমান,
অশনিপাতে হাসিতে তোমার মহি হয় খান খান

চলতে পথে হঠাৎ আমি থমকে গিয়েছি,
উদাসচোখে অম্বুধিতে তোমায় দেখেছি ;
নলিনরাশি মলিন হলো তটিনী সমাগমে,
লহরীমালা অমিওপানে মগ্ন দিবাযামে

চলতে পথে হঠাৎ আমি থমকে গিয়েছি,
উদাসচোখে কাননমাঝে তোমায় দেখেছি ;
কালের প্রতীক পাদবরাজি দাঁড়িয়ে আছে ঠাঁয়,                 নভোশ্চরের গীতি নিস্বনে নিরবতা ভেঙেযায়

চলতে পথে হঠাৎ আমি থমকে গিয়েছি,
উদাসচোখে ঝিলের নীরে তোমায় দেখেছি ;
মরালজোড়া নাড়ছে ডানা অমল অনিলে,
তারি পরশে অধরসম অম্বুজগুলি দোলে

চলতে পথে হঠাৎ আমি থমকে গিয়েছি,
উদাসচোখে মালঞ্চেতে তোমায় দেখেছি ;
ঋতুরাজকালে স্বর্গ রচিয়া বাঁধিলে প্রেমডোরে,
কুসুমকান্তি হেরিয়া অলি ক্ষণে ক্ষণে গুঞ্জরে

চলতে পথে হঠাৎ আমি থমকে গিয়েছি,
উদাসচোখে ইন্দুমতীতে তোমায় দেখেছি ;
শৈবলিনীর মুকুরসম স্বচ্ছ সদ্মে বিধু,
রজত বরণ তুহিন ছড়িয়ে পাবক জ্বালায় শুধু

চলতে পথে অনুক্ষণ আমি থমকে চলেছি,
লোলুপ চোখে সৃষ্টি ব্যাপিয়া তোমায় দেখেছি;
অন্তরীক্ষে জলে-'লে অখিল মেদিণী জুড়ে,
তদীয় চিতে তোমার রূপের বিজয় কেতন উড়ে 


         প্রতিফলন

          ঈশ্বরগঞ্জ - ২৪/০৬/১৯৯০

বিদোহী বীর নজরুল, তুমি কোথায় আছো  জানি না                                                                                      তোমার বীণায় বেসুরো সুর বেজেছিল আমি মানি না।
সুদূর অতীতে বলেছিলে তুমি কবে -
                                                  স্পষ্ট দীপ্ত রবে,
দারিদ্র তোমায় করেছে মহান
দিয়েছে জগতে খ্রীষ্টেরই সম্মান
আরো দিয়েছে অসীম সাহস -
                                              অসংকোচ প্রকাশ ;
বিদ্রোহেরই চাপা অনলে একি সব ছাঁই পাশ!
সুদীর্ঘকাল পরে আজ আমি করেছি আবিষ্কার -
দুঃখ আমায় করেছে মহান
দিয়েছে অশেষ দান,
বিনিময়ে তাকে দেবার মত নেই কোন প্রতিদান ;
দুঃখের কাছে ঋণী হয়ে আমি বাধা দিয়েছি এ প্রাণ,
                                               হয়েছি চির পাষাণ।

আমি নই কবি তোমার মতন 
বিদ্রোহী দুর্বার,
আমার বীণার সুকরূণ স্বরে বেদনার ঝংকার।
দুঃখ যাতনা, ব্যাথা ও বেদনা আমারি গলার মালা,
পৃথিবীর যত শোক-তাপ-গ্লানি
ত্রিশূলের মত আঘাত হানি
করেছে আমার ছোট্ট হৃদয়
                                    অসংখ্য ফালা ফালা,
মুছে দিয়ে এ হৃদয়ের যত
                                    সুপ্ত দহন জ্বালা। 



                            গাঁয়ের বধু
                     ঈশ্বরগঞ্জ - ১৬/০২/১৯৮৮

      তাম্বুলে রাঙ্গিয়া ঠোঁট গাঁয়ের বধূ যায়,

      আনত বদন লাজে আর ভীরু দুটি পায়।
             টুকটুকে লাল শাড়ি পরে
             কলসটি ঐ কাঁখে ধরে
     মৃদুতালে নিতম্ব তার দোলছে কি শোভায়,
     তাম্বুলে রাঙ্গিয়া ঠোঁট গাঁয়ের বধূ যায়।

     তাম্বুলে রাঙ্গিয়া ঠোঁট গাঁয়ের বধূ যায়,
     সম্মুখেতে দৃষ্টি রাখি কোথাও নাহি চায়।
            আলতা রাঙা দুটি পায়
            স্রোতস্বিনীর দিকে ধায়
     কিসের অজানা টানে নিজেতে হারায়,
     তাম্বুলে রাঙ্গিয়া ঠোঁট গাঁয়ের বধূ
  
     তাম্বুলে রাঙ্গিয়া ঠোঁট গাঁয়ের বধূ যায়,
     কোমল পরশ বুলায় দেহে বাসন্তী বায়।
           রূপোর নোলক শোভে নাকে
           ঘোমটার আড়ালে থেকে
     কি রূপ অমন করে গোপনে লোকায়,
     তাম্বুলে রাঙ্গিয়া ঠোঁট গাঁয়ের বধূ যায়।

     তাম্বুলে রাঙ্গিয়া ঠোঁট গাঁয়ের বধূ যায়,
     রঙীন স্বপ্নে বিভোর সবুজের ছোঁয়ায়।
           বিনুণী রচে কালো চুলে
          কানে রূপোর বালি দোলে
    ধরণীর রূপ লভিল সেকি নারীর ছায়ায়,
    তাম্বুলে রাঙ্গিয়া ঠোঁট গাঁয়ের বধূ যায়।

    তাম্বুলে রাঙ্গিয়া ঠোঁট গাঁয়ের বধূ যায়,
    অনন্ত প্রকৃতি আসি অঙ্গেতে লুটায়।
         রিনিঝিনি বাজছে কাকন
         সোহাগ ভরা হাতের বাঁধন
    উদাস আঁখি কিসের মায়ায় নির্মিলিয়া চায়,
    তাম্বুলে রাঙ্গিয়া ঠোঁট গাঁয়ের বধূ যায়।




             ফাগুন বুঝি এলো
                            ঈশ্বরগঞ্জ ০৫/০৩/১৯৮৮ ইং

  ষড় ঋতুর আবর্তে আজি 
                            ফাগুন বুঝি এলো 
  কুহু কুহু ঐ মধুর সুরে     
                          কোকিল উতলা হলো।
  থোকায় থোকায় শিমুল ফোঁটে
                          লালে লাল করে সবি,
  ঠিক যেন এক শিল্পীর হাতে
                             জীবন্ত আঁকা ছবি।
  মাতাল মদির গোধূলী লগ্নে
                            ঘুম ঘুম ভাব জাগে,
  আমের বাগানে মিষ্টি ঘ্রাণে
                             কেমন যেন লাগে।
  ফুলে ফুলে উড়ে মধু মক্ষিকা
                             করে মধু আহোরণ,
  এলোমেলো বেগে কোমল পরশ
                                 বুলায় প্রভঞ্জন।
  নিতনব রূপে ধরিত্রি আজি
                            সাজিল রঙীন বেশে
  চির যৌবন ফিরে পেলো যেন
                          আজিকে ফাগুন মাসে।


          হঠাৎ সেদিন
                    ঈশ্বরগঞ্জ - ১৮/১২/১৯৮৯ ইং

হঠাৎ সেদিন -
ক্ষণিকের জন্য বন্ধ হয়ে গেল আমার হৃৎপিন্ড,
ঘড়ির কাঁটার অবিরাম টিকটিক শব্দের মতো
আর স্পন্দিত হচ্ছে না অন্ধকার বক্ষপিঞ্জরের ভিতর।                                                                                      মন্ত্রচালিতের ন্যায় হাতরেখে অনুভব করতে গিয়ে             ব্যর্থ হলাম বারবার।

দুই মিনিট, চার মিনিট কিংবা অসংখ্য মিনিট -
জানিনা কখন যে চলে গেলো লাগামহীন ঘোড়ার মতো।                           
শুনতে চেষ্টা করলাম কোন ধ্বনি বা প্রতিধ্বনি
সচল হয়ে উঠলো মুহূর্তে আমার শ্রবনেন্দ্রীয়  -
                                                    ও কিসের শব্দ ?
                                             মরুভূমির ধূলিঝড় ?
কিংবা সহস্র কুড়ে ঘর ভাঙা বৈশাখী ঝড়ের তান্ডব নৃত্য !                            
কিংবা অগ্নিগিরির জেগে ওঠার শব্দ ! মনে হয় -    
উত্তপ্ত লাভা উদ্গিরিত হয়ে গড়িয়ে পড়ছে শুকনো             গিরিদেহে !

ড্রাগ অ্যাডিক্টের মতো হয়ে রই নেশাচ্ছন্ন।
একি তবে আমার প্রিয়ার দীর্ঘশ্বাস ?
কিংবা গড়িয়ে পড়া উষ্ণ চোখের জল ?


        ছোট্ট একটা ধাঁধাঁ
                    ঈশ্বরগঞ্জ - ১৫/১২/১৯৯০ ইং

চার, আট, বারো.............
                       এর পরে কী বলতে পারো ?
একটু ভেবে দেখো
তবে গণিতশাস্ত্রে কাঁচা হলে বৃথা চেষ্টা রাখো ।

মন দিয়ে তবে শুনো
ভুলনা কখনো -  
সমান্তর ধারার মাঝে সংখ্যা তিনটি ফেলো,
দেখবে কেমন অনায়াসে
                           বেড়িয়ে এসেছে ষোল ।
                            
বলো তো দেখি এবার
কি জন্যে এই ধাঁধাঁটি আমি করেছি আবিস্কার ?
স্বরণে আসেকি একাত্তরের বিজয়লাভের কথা ?
          বীরাঙ্গনা বাংলা মায়ের পুত্রহারা ব্যথা ;
এইসে দিন, সবার মাঝে আবার এলো ফিরে,
                             স্মৃতির আকাশ ঘিরে,
যেদিন রবে ইতিহাসে হয়ে চির অমর,
বছর ঘুরে সেদিন এলো ষোলই ডিসেম্বর ।


       পথ চলার বিড়ম্বনা
                    ঈশ্বরগঞ্জ - ২৬/১২/১৯৮৯ ইং

যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে -
          দাঁড়িয়ে রয়েছি আমি তিন রাস্তার মোড়ে,
পায়ে হেঁটে ধীরে ধীরে চলেছি অদূরে ।
তিনটি রাস্তাই আমায়
               হাতছানি দিয়ে ডাকছে বারে বারে ।
আমি জানি, আমি জানি তিনটি রাস্তাই
                      আমার গন্তব্যস্থলে যাওয়ার ;
অথচ জানিনা কোনটি সহজে পথ চলার ।

যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে -
দাঁড়িয়ে রয়েছি আমি তিন রাস্তার মোড়ে,
কে বলে দেবে আমায় ? কোনটি বেছে নেবো ?
      কোন পথে গেলে তাড়াতাড়ি পৌছাবো ?
হয়তো আমার এই প্রশ্নের উত্তর দিতে
                                  কেউ পারবে না,
            তবে কি আমার চলার শেষ হবে না !

না, তোমরা আমায় পিছু ডেকোনা
আমার মোহ ভেঙে দিওনা
একা একা আমি মেঠো পথ ধরে
                           চলে যেতে চাই অবাধে
কেন বার বার আমাকে তোমরা
                       টেনে নিতে চাও রাজপথে ?



           বিচিত্র সাধ
                 ঈশ্বরগঞ্জ - ১৪/০২/১৯৯০ ইং
                            
         তুমি যদি আলো হও ভরা পূর্ণিমার
         আমি তবে অমানিশার নিকশ আঁধার,
                 সাদা জ্যোছনায় ভরে 
                 ধরাতল আলো করে
        কেড়ে নিলে মন তুমি পলকে সবার
        আমি আছি বলে তাই প্রকাশ তোমার ।

        তুমি যদি ফুল হয়ে থাকো বাগিচায়
        আমি তবে কাঁটা হবো সবুজ বোঁটায়,
                 রঙ শোভা সৌরভে
                 বিমুগ্ধ হয়ে ভবে
        ভাবুক প্রেমিক সবে ছিঁড়ে নিতে চায়
        ক্ষতহাতে ফিরে যায় আমারি খোঁচায় ।

        তুমি যদি নদীরূপে বয়ে যাও ধীরে
        আমি তবে মিশে যাবো সাগরের নীরে,
                দু’কুল ছাপিয়া জলে
                মাঠ ভরে দাও ফসলে
        চৈত্রের তাপে বালু চর ওঠে ঘিরে
        জোয়ারের রূপে আমি আসি বুক চিরে ।

        তুমি যদি হতে চাও শ্যামল বনানী
        আমি তবে মুক্তাকাশ সুনীল বরণী,
               ফুল ফল শোভা পায়
               তোমারি সবুজ গায়
        তবু তুমি বলো কেন এতো অভিমানী
        দিগন্তে পাবে মোরে কাছে নিও টানি ।

        তুমি যদি হয়ে যাও শাওনের সাঁঝ
        আমি তবে হয়ে যাবো হৃদকাঁপা বাজ,
                 হিমেল পবন রথে
                 চলে যাও একসাথে
        কবির কাব্যে ধরা দিয়ে পাও লাজ
        তোমার হাঁসিতে সদা ঝরা মোর কাজ ।

         তুমি যদি হও শেষে মানসী আমার
         আমি তবে চিরসাথী হবো যে তোমার,
                তোমার প্রেমের মালা
                আমার হৃদয়ে দোলা
        দিয়ে যায় অবিরত কেনো বার বার
        জীবনে মরণে তুমি শুধু যে আমার ।



            নিশিবধূ
                     ঈশ্বরগঞ্জ - ১৬/০২/১৯৯০ ইং

 নিশিরাতে তুমি এসে মিষ্টি হাসি হেসে
                         একবার দেখা দিয়ে যাও,
 দূর থেকে চেয়ে চেয়ে কাছে ডাকো মোরে
                          মায়াবী চোখের ইশারায়
                          আমার মনের জানালায় ।

দু’হাত বাড়িয়ে আমি কাছে যেতে থাকি
তোমার দু’চোখে শুধু চোখ দু’টি রেখে
                             কামনার হাসি ফোটে
                           তোমার  কোমল ঠোটে
কিশের নেশায় তুমি যাও মোরে ডেকে ?
পেলব দেহটি শুধু কেঁপে কেঁপে ওঠে ।

তোমার প্রেমের শুধা পান করিবারে
                           মাতালের মত ছুটে যাই
প্রেমের আলিঙ্গনে কাছে পেতে চাই
                           জান্তব ক্ষুধা নিয়ে মনে ।
জড়িয়ে ধরতে যেই দু’হাত বাড়াই
চোখের পলকে দেখি তুমি কাছে নাই ;
নিশিরাতে বার বার এই লুকোচুরি
                     কেন খেলে যাও মোর সনে ?
          তবে কি তোমায় আমি কাছে পাবোনা ?
               নিশিবধূ রূপে তুমি ধরা দেবে না ?






             চরম পত্র
                    ঈশ্বরগঞ্জ - ০৭/১২/১৯৯০ ইং

 মরিতে চাহি আমি এ সুন্দর ভুবনে
 মানুষের মাঝে আমি চাহি না বাঁচিতে,
          প্রেম-ভালবাসা দিয়ে
          এ ভুবন ভরে নিয়ে
   চেয়েছিনু ধরাধামে স্বর্গ রচিতে,
   কত আশা ছিল মোর ছোট্ট এ মনে ।
            
  জানিনা সেদিন কবে অতীত হয়েছে -
  হৃদয়ের বিনিময়ে হৃদয় পেয়েছে
  প্রেমের বিজয় গীতি সকলে গেয়েছে
  অর্থের লোভ নাহি ছিল কোন জনে ।

  সেদিন কখনো আর আসিবেনা জানি
                                সুন্দর এই ভুবনে
                            আমারি ছোট্ট জীবনে
  তোমার মধুর স্মৃতি রহিবে স্মরণে -
                         হাসিমাখা সেই মুখখানি,
  অর্থের বিনিময়ে প্রেম কিনে নিতে
                       পারিবনা কভু জেনো রাণী ।